OSI (Open Systems Interconnection) মডেল

OSI (Open Systems Interconnection) মডেল হলো নেটওয়ার্ক কমিউনিকেশনের জন্য একটি কনসেপচুয়াল ফ্রেমওয়ার্ক, যা নেটওয়ার্ক প্রোটোকল এবং ফাংশনালিটিকে ৭টি লেয়ার বা স্তরে বিভক্ত করে। এই মডেলটি ১৯৮৪ সালে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন (ISO) দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। OSI মডেলের প্রতিটি লেয়ার নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করে এবং উপরের ও নিচের লেয়ারের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করে। নিচে OSI মডেলের ৭টি লেয়ারের বিস্তারিত আলোচনা দেওয়া হলো:


1. ফিজিক্যাল লেয়ার (Physical Layer)

  • লেয়ার নম্বর: লেয়ার ১
  • কাজ: ফিজিক্যাল লেয়ার ডেটার ফিজিক্যাল ট্রান্সমিশন নিয়ন্ত্রণ করে। এটি বিটস (0 এবং 1) কে ইলেকট্রিক্যাল, অপটিক্যাল বা রেডিও সিগন্যালে রূপান্তর করে এবং নেটওয়ার্ক মিডিয়াম (যেমন কেবল, ওয়্যারলেস) এর মাধ্যমে ট্রান্সমিট করে।
  • প্রোটোকল/টেকনোলজি: Ethernet, USB, Bluetooth, Fiber Optics, Coaxial Cable.
  • ডিভাইস: হাব, রিপিটার, মডেম, নেটওয়ার্ক কেবল।

2. ডেটা লিংক লেয়ার (Data Link Layer)

  • লেয়ার নম্বর: লেয়ার ২
  • কাজ: ডেটা লিংক লেয়ার নোড-টু-নোড ডেটা ট্রান্সফার নিয়ন্ত্রণ করে। এটি ফিজিক্যাল অ্যাড্রেস (MAC অ্যাড্রেস) ব্যবহার করে ডেটা ফ্রেম তৈরি করে এবং এরর ডিটেকশন ও সংশোধন করে।
  • প্রোটোকল/টেকনোলজি: Ethernet, PPP (Point-to-Point Protocol), MAC (Media Access Control).
  • ডিভাইস: সুইচ, ব্রিজ, নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড (NIC).

3. নেটওয়ার্ক লেয়ার (Network Layer)

  • লেয়ার নম্বর: লেয়ার ৩
  • কাজ: নেটওয়ার্ক লেয়ার ডেটা প্যাকেটের রাউটিং এবং ফরওয়ার্ডিং নিয়ন্ত্রণ করে। এটি লজিক্যাল অ্যাড্রেস (IP অ্যাড্রেস) ব্যবহার করে ডেটা প্যাকেটকে সোর্স থেকে ডেস্টিনেশনে পৌঁছায়।
  • প্রোটোকল/টেকনোলজি: IP (Internet Protocol), ICMP (Internet Control Message Protocol), ARP (Address Resolution Protocol).
  • ডিভাইস: রাউটার, লেয়ার ৩ সুইচ।

4. ট্রান্সপোর্ট লেয়ার (Transport Layer)

  • লেয়ার নম্বর: লেয়ার ৪
  • কাজ: ট্রান্সপোর্ট লেয়ার ডেটার নির্ভরযোগ্য ট্রান্সমিশন নিশ্চিত করে। এটি ডেটা সেগমেন্টেশন, এরর রিকভারি, ফ্লো কন্ট্রোল এবং এন্ড-টু-এন্ড কানেকশন ম্যানেজ করে।
  • প্রোটোকল/টেকনোলজি: TCP (Transmission Control Protocol), UDP (User Datagram Protocol).
  • ডিভাইস: গেটওয়ে, ফায়ারওয়াল।

5. সেশন লেয়ার (Session Layer)

  • লেয়ার নম্বর: লেয়ার ৫
  • কাজ: সেশন লেয়ার ডিভাইসগুলোর মধ্যে কমিউনিকেশন সেশন তৈরি, ম্যানেজ এবং টার্মিনেট করে। এটি ডেটা এক্সচেঞ্জের সময় সিঙ্ক্রোনাইজেশন এবং ডায়ালগ কন্ট্রোল নিশ্চিত করে।
  • প্রোটোকল/টেকনোলজি: NetBIOS, PPTP (Point-to-Point Tunneling Protocol).
  • ডিভাইস: গেটওয়ে।

6. প্রেজেন্টেশন লেয়ার (Presentation Layer)

  • লেয়ার নম্বর: লেয়ার ৬
  • কাজ: প্রেজেন্টেশন লেয়ার ডেটা ফরম্যাটিং, এনক্রিপশন এবং ডিক্রিপশন নিয়ন্ত্রণ করে। এটি অ্যাপ্লিকেশন লেয়ারকে ডেটা উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত করে।
  • প্রোটোকল/টেকনোলজি: SSL/TLS (Secure Sockets Layer/Transport Layer Security), JPEG, MPEG.
  • ডিভাইস: গেটওয়ে।

7. অ্যাপ্লিকেশন লেয়ার (Application Layer)

  • লেয়ার নম্বর: লেয়ার ৭
  • কাজ: অ্যাপ্লিকেশন লেয়ার ইউজার ইন্টারফেস এবং নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রদান করে। এটি ইউজার এবং নেটওয়ার্কের মধ্যে ইন্টারঅ্যাকশন নিয়ন্ত্রণ করে।
  • প্রোটোকল/টেকনোলজি: HTTP (Hypertext Transfer Protocol), FTP (File Transfer Protocol), SMTP (Simple Mail Transfer Protocol), DNS (Domain Name System).
  • ডিভাইস: প্রোক্সি সার্ভার, এন্ড-ইউজার ডিভাইস (যেমন কম্পিউটার, স্মার্টফোন)।

OSI মডেলের গুরুত্ব

  • স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন: OSI মডেল নেটওয়ার্ক প্রোটোকল এবং ডিভাইসগুলোর মধ্যে ইন্টারঅপারেবিলিটি নিশ্চিত করে।
  • ট্রাবলশুটিং: প্রতিটি লেয়ার আলাদাভাবে কাজ করে, তাই সমস্যা দ্রুত শনাক্ত এবং সমাধান করা যায়।
  • শিক্ষা: নেটওয়ার্কিং কনসেপ্ট বুঝতে এবং শেখার জন্য OSI মডেল একটি গুরুত্বপূর্ণ টুল।

সংক্ষেপে

  1. ফিজিক্যাল লেয়ার: ডেটার ফিজিক্যাল ট্রান্সমিশন।
  2. ডেটা লিংক লেয়ার: নোড-টু-নোড ডেটা ট্রান্সফার।
  3. নেটওয়ার্ক লেয়ার: ডেটা প্যাকেট রাউটিং।
  4. ট্রান্সপোর্ট লেয়ার: নির্ভরযোগ্য ডেটা ট্রান্সমিশন।
  5. সেশন লেয়ার: কমিউনিকেশন সেশন ম্যানেজমেন্ট।
  6. প্রেজেন্টেশন লেয়ার: ডেটা ফরম্যাটিং এবং এনক্রিপশন।
  7. অ্যাপ্লিকেশন লেয়ার: ইউজার ইন্টারফেস এবং নেটওয়ার্ক সার্ভিস।

OSI মডেল নেটওয়ার্কিং এর একটি মৌলিক কনসেপ্ট এবং এটি নেটওয়ার্ক ডিজাইন, ইমপ্লিমেন্টেশন এবং ট্রাবলশুটিং এর জন্য অপরিহার্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *