নেটওয়ার্ক ডিভাইস এর পরিচিতি

নেটওয়ার্ক ডিভাইস হলো এমন যন্ত্র বা হার্ডওয়্যার যা নেটওয়ার্কে ডেটা ট্রান্সমিশন, রিসিভিং এবং রাউটিং করতে ব্যবহৃত হয়। নিচে প্রধান নেটওয়ার্ক ডিভাইসগুলোর বিস্তারিত আলোচনা দেওয়া হলো:


1. রাউটার (Router)

  • কাজ: রাউটার হলো একটি নেটওয়ার্ক ডিভাইস যা বিভিন্ন নেটওয়ার্কের মধ্যে ডেটা প্যাকেট ফরওয়ার্ড করে। এটি একটি নেটওয়ার্ক থেকে অন্য নেটওয়ার্কে ডেটা পাঠানোর জন্য পথ নির্ধারণ করে।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • লেয়ার ৩ (নেটওয়ার্ক লেয়ার) ডিভাইস।
    • IP অ্যাড্রেস ব্যবহার করে ডেটা রাউট করে।
    • WAN (Wide Area Network) এবং LAN (Local Area Network) এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে।
  • উদাহরণ: হোম রাউটার, সিসকো রাউটার।

2. সুইচ (Switch)

  • কাজ: সুইচ হলো একটি নেটওয়ার্ক ডিভাইস যা একটি LAN (Local Area Network) এর মধ্যে ডিভাইসগুলোকে সংযুক্ত করে এবং ডেটা প্যাকেট ফরওয়ার্ড করে। এটি MAC অ্যাড্রেস ব্যবহার করে ডেটা পাঠায়।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • লেয়ার ২ (ডেটা লিংক লেয়ার) ডিভাইস।
    • MAC অ্যাড্রেস টেবিল ব্যবহার করে ডেটা ফরওয়ার্ড করে।
    • একাধিক ডিভাইসের মধ্যে ডেটা ট্রান্সফারকে অপটিমাইজ করে।
  • উদাহরণ: ম্যানেজড সুইচ, আনম্যানেজড সুইচ।

3. হাব (Hub)

  • কাজ: হাব হলো একটি বেসিক নেটওয়ার্ক ডিভাইস যা একটি LAN এর মধ্যে ডিভাইসগুলোকে সংযুক্ত করে। এটি ডেটা প্যাকেটকে ব্রডকাস্ট করে, অর্থাৎ একটি পোর্টে আসা ডেটা সব পোর্টে পাঠায়।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • লেয়ার ১ (ফিজিক্যাল লেয়ার) ডিভাইস।
    • ডেটা ব্রডকাস্ট করে, তাই নেটওয়ার্ক ট্রাফিক বাড়ে।
    • স্মার্ট ডিভাইস নয়, এটি ডেটা ফিল্টারিং বা ফরওয়ার্ডিং করতে পারে না।
  • উদাহরণ: ইথারনেট হাব।

4. মডেম (Modem)

  • কাজ: মডেম হলো একটি ডিভাইস যা ডিজিটাল সিগন্যালকে অ্যানালগ সিগন্যালে এবং অ্যানালগ সিগন্যালকে ডিজিটাল সিগন্যালে রূপান্তর করে। এটি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (ISP) এর সাথে কম্পিউটার বা রাউটারকে সংযুক্ত করে।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • লেয়ার ১ (ফিজিক্যাল লেয়ার) ডিভাইস।
    • টেলিফোন লাইন, ক্যাবল বা ফাইবার অপটিক কেবল ব্যবহার করে।
  • উদাহরণ: DSL মডেম, ক্যাবল মডেম।

5. অ্যাকসেস পয়েন্ট (Access Point – AP)

  • কাজ: অ্যাকসেস পয়েন্ট হলো একটি ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক ডিভাইস যা ওয়্যারলেস ডিভাইসগুলোকে একটি ল্যানের সাথে সংযুক্ত করে। এটি Wi-Fi সিগন্যাল ট্রান্সমিট করে।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • লেয়ার ২ (ডেটা লিংক লেয়ার) ডিভাইস।
    • ওয়্যারলেস ক্লায়েন্ট ডিভাইসগুলিকে নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করে।
  • উদাহরণ: Wi-Fi রাউটার, স্ট্যান্ডঅ্যালোন অ্যাকসেস পয়েন্ট।

6. ফায়ারওয়াল (Firewall)

  • কাজ: ফায়ারওয়াল হলো একটি সিকিউরিটি ডিভাইস যা নেটওয়ার্কে প্রবেশ এবং প্রস্থান করা ডেটা ট্রাফিক মনিটর এবং কন্ট্রোল করে। এটি অননুমোদিত অ্যাক্সেস এবং ম্যালিসিয়াস ট্রাফিক ব্লক করে।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • লেয়ার ৩ (নেটওয়ার্ক লেয়ার) এবং লেয়ার ৪ (ট্রান্সপোর্ট লেয়ার) ডিভাইস।
    • সিকিউরিটি পলিসি প্রয়োগ করে।
  • উদাহরণ: হার্ডওয়্যার ফায়ারওয়াল, সফটওয়্যার ফায়ারওয়াল।

7. নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড (NIC)

  • কাজ: NIC হলো একটি হার্ডওয়্যার কম্পোনেন্ট যা কম্পিউটার বা অন্য ডিভাইসকে নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করে। এটি ডেটা ট্রান্সমিশন এবং রিসিভিং এর জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • লেয়ার ১ (ফিজিক্যাল লেয়ার) এবং লেয়ার ২ (ডেটা লিংক লেয়ার) ডিভাইস।
    • ইথারনেট বা Wi-Fi সংযোগ প্রদান করে।
  • উদাহরণ: ইথারনেট কার্ড, Wi-Fi কার্ড।

8. ব্রিজ (Bridge)

  • কাজ: ব্রিজ হলো একটি নেটওয়ার্ক ডিভাইস যা দুটি LAN সেগমেন্টকে সংযুক্ত করে এবং ডেটা প্যাকেট ফরওয়ার্ড করে। এটি MAC অ্যাড্রেস ব্যবহার করে ডেটা ফিল্টারিং করে।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • লেয়ার ২ (ডেটা লিংক লেয়ার) ডিভাইস।
    • দুটি নেটওয়ার্ক সেগমেন্টের মধ্যে ডেটা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে।
  • উদাহরণ: নেটওয়ার্ক ব্রিজ।

9. গেটওয়ে (Gateway)

  • কাজ: গেটওয়ে হলো একটি ডিভাইস যা দুটি ভিন্ন প্রোটোকল বা নেটওয়ার্কের মধ্যে ডেটা ট্রান্সলেশন করে। এটি নেটওয়ার্কের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • লেয়ার ৩ (নেটওয়ার্ক লেয়ার) এবং লেয়ার ৪ (ট্রান্সপোর্ট লেয়ার) ডিভাইস।
    • ভিন্ন নেটওয়ার্ক বা প্রোটোকলের মধ্যে ডেটা ট্রান্সলেশন করে।
  • উদাহরণ: ইন্টারনেট গেটওয়ে।

10. রিপিটার (Repeater)

  • কাজ: রিপিটার হলো একটি ডিভাইস যা নেটওয়ার্ক সিগন্যালকে এমপ্লিফাই করে যাতে সিগন্যাল দূরত্ব বাড়ানো যায়।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • লেয়ার ১ (ফিজিক্যাল লেয়ার) ডিভাইস।
    • সিগন্যালের শক্তি বাড়ায়।
  • উদাহরণ: Wi-Fi এক্সটেন্ডার।

11. মাল্টিলেয়ার সুইচ (Multilayer Switch)

  • কাজ: মাল্টিলেয়ার সুইচ হলো একটি সুইচ যা লেয়ার ২ (ডেটা লিংক লেয়ার) এবং লেয়ার ৩ (নেটওয়ার্ক লেয়ার) উভয় ফাংশন সমর্থন করে। এটি ডেটা ফরওয়ার্ডিং এবং রাউটিং উভয় কাজ করে।
  • বৈশিষ্ট্য:
    • লেয়ার ২ এবং লেয়ার ৩ ডিভাইস।
    • সুইচ এবং রাউটার উভয়ের বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
  • উদাহরণ: সিসকো মাল্টিলেয়ার সুইচ।

সংক্ষেপে

  • রাউটার: নেটওয়ার্কের মধ্যে ডেটা রাউট করে।
  • সুইচ: LAN এর মধ্যে ডেটা ফরওয়ার্ড করে।
  • হাব: ডেটা ব্রডকাস্ট করে।
  • মডেম: ডিজিটাল এবং অ্যানালগ সিগন্যাল রূপান্তর করে।
  • অ্যাকসেস পয়েন্ট: ওয়্যারলেস ডিভাইসগুলিকে নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করে।
  • ফায়ারওয়াল: নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি প্রদান করে।
  • NIC: কম্পিউটারকে নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করে।
  • ব্রিজ: দুটি LAN সেগমেন্ট সংযুক্ত করে।
  • গেটওয়ে: ভিন্ন নেটওয়ার্ক বা প্রোটোকলের মধ্যে ডেটা ট্রান্সলেশন করে।
  • রিপিটার: সিগন্যাল শক্তি বাড়ায়।
  • মাল্টিলেয়ার সুইচ: সুইচ এবং রাউটার উভয়ের কাজ করে।

এই ডিভাইসগুলো নেটওয়ার্কের কার্যকারিতা, দক্ষতা এবং সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *